দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য ও তিক্ততা :
ইসলামের নির্দেশনা
আল্লাহ তাআলার অশেষ শুকরিয়া তিনি মুসলমানকে ইসলামের মত পূর্ণাঙ্গ দ্বীন দান করেছেন। নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত আদায় করার পথ ও পন্থা যেমন বলে দিয়েছেন তেমনি লেনদেন, আচার-আচরণ, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন কেমন হবে তাও জানিয়ে দিয়েছেন। বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন ও পারিবারিক জীবনের সূচনা হয়। ইসলামী শরীয়তে এই সম্পর্ক কায়েম করতে হলে যেমন কিছু সুনির্ধারিত বিধান রয়েছে তেমনি এই সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলেও কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এগুলো অনুসরণের জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে কুরআন ও হাদীসে। এগুলো অমান্য করার কারণে জীবনের পদে পদে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় এবং বালা মসিবতের মধ্যে নিপতিত হতে হয়, যার বাস্তব নমুনা প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো পেপার-পত্রিকায় শিরোনাম হচ্ছে। শরীয়ত পরিপন্থী পদ্ধতিতে তালাক প্রদান করে দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটালে যে পেরেশানী ও জটিলতা সৃষ্টি হয় তা বর্ণনাতীত।
বিবাহ করার উদ্দেশ্য তালাক দেয়া নয়: বিবাহের মাধ্যমে যে দাম্পত্য জীবনের সূচনা হয় তা অটুট ও আজীবন স্থায়ীত্ব লাভ করা ইসলামের কাম্য। সুতরাং স্বামী কখন ও বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করবে না এবং বিবাহ বিচ্ছেদের পরিস্থিতেও সৃষ্টি করবে না। কেননা, বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হলে এর কু-প্রভাব শুধু স্বামী স্ত্রীর উপর সীমা বদ্ধ থাকে না। গোটা পরিবারটি তছনছ হয়ে যায়। এই ঘটনার জের পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে বংশীয় কোন্দলে পরিণত হয়। আর এ বিষয়গুলো দূর করার জন্য ইসলামী শরীয়ত বিভিন্ন বিধান দিয়েছে। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে অনেক নির্দেশনা রয়েছে। প্রথমে বুঝিয়ে শুনিয়ে সমাধান করতে হবে এরপর স্ত্রীর সাথে শয্য ত্যাগ করার পথ অবলম্বন করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
স্বামী ও স্ত্রীর প্রতি কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা: সাধারণ বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার মৌলিক কারণ অনেক।
সেগুলো হলো, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হক যথাযথ আদায় না করা। কথায় কাজে অযথা দ্বিমত পোষণ করা। একে অন্যের প্রতি আস্থা না রাখা। বিশ্বাস না করা। এসকল কারণে হিংসা বিদ্বেষ চরমে পৌঁছে এবং দাম্পত্য জীবন ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়। সুতরাং উভয়ের কর্তব্য হলো, যথাযথভাবে হক আদায় করা। কোন দোষ-ত্রুটি হলে স্বীকার করা এবং অতি দ্রুত সেটাকে শুধরে নেওয়া।
এখানে স্বামী-স্ত্রীর কিছু শরয়ী হক তুলে ধরা হল।
স্বামীর উপর স্ত্রীর হক :
* স্ত্রীর সাথে সর্বদা ভালো আচরণ করা।
* স্ত্রীর কোন কথায় বা কাজে কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করা।
* উচ্ছৃঙ্খল, বেপর্দা চলাফেরা করতে থাকলে নম্র ভাষায় তাকে বুঝানো।
* সামান্য বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বিবাদ না করা।
* শুধু স্ত্রীর প্রতি কুধারণা না করা। স্ত্রীর সম্পর্কে উদাসীন না থাকা।
* সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীর খোরপোষের ব্যবস্থা করা। অপচয় না করা।
* নামাজ ও দ্বীনের আহকাম মেনে চলার প্রতি উৎসাহ দেওয়া।
* একাধিক স্ত্রী থাকলে সমতা রক্ষা করা।
* অনুমতি ব্যতীত আযল না করা।
* একান্ত নিরুপায় না হলে তালাক না দেওয়া। প্রয়োজনে শরীয়ত গৃহিত পন্থায় তালাক দেওয়া।
* চাহিদা অনুযায়ী তাদের সাথে মেলামেশা করা। না করা।
* স্ত্রীর সাথে মেলামেশার চিত্র অন্যের কাছে বর্ণনা না করা।
* প্রয়োজনে স্ত্রীকে শাসন করা।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক:
* সর্বদা স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করা।
* শরীয়ত সম্মত প্রত্যেক কাজে স্বামীর আনুগত্য করা।
* গুনাহ ও শরীয়ত বিরোধী কাজে অপরাগতা তুলে ধরা।
* প্রয়োজনাতিরিক্ত ভরণ পোষণ দাবি না করা।
* পরপুরুষের সাথে কোন রকম সম্পর্ক না রাখা।
* স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া।
* অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া।
* স্বামীকে অসন্তুষ্ট করে নফল নামাজ না পড়া।
* স্বামীর অসুন্দর ও দরিদ্রতার কারণে তুচ্ছ না করা।
* কারো কাছে স্বামীর বদনাম দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা।
* স্বামীর সাথে অসংযত আচরণ না করা। স্বামীকে কষ্ট না দেওয়া।
উত্তম স্ত্রীর গুণাবলী:
কুরআন ও হাদীসের বিবরণ থেকে জানা যায় উত্তম স্ত্রী হল সে, যে স্বামীকে সম্মান করে। স্বামীর বশ্যতা স্বীকার করে। স্বামীর আদেশ নিষেধ মেনে চলে। স্বামীর বশ্যতা স্বীকারসহ ধন সম্পদ হেফাজত করে। নিজের সতীত্ব রক্ষা করে শরীয়ত অনুযায়ী চলে ।
উত্তম স্বামী:
একটি পরিবার সুন্দর ও সুখময় করে গড়ে তোলে স্বামী। সুতরাং সে যেন স্ত্রীর খুটিনাটি বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে এবং স্ত্রীকে সবকিছু মেনে নেওয়ার জন্য বাধ্য না করে।
অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধনের কয়েকটি নির্দেশনা: কোন স্ত্রী যদি স্বামীর আনুগত্য না করে। স্বামীর হক আদায় না করে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করতে থাকে তাহলে স্বামীর দায়িত্ব হল সংশোধনের জোর চেষ্টা করা। শরীয়ত এধরনের স্ত্রীকে সুসৃঙ্খল জীবনে ফিরিয়ে আনতে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। স্বামী প্রথমে সেগুলো অনুসরণ করবে। তারপর যদি কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মুতাবেক তালাক দেওয়ার পথ বেছে নিতে পারবে।
তবে মতামতে তালাক দেওয়া যাবে না।
প্রথম পদক্ষেপ:
স্ত্রীর অবাধ্যতা দেখে উত্তেজিত না হওয়া। ঝগড়া বিবাদের পথ বেছে না নেওয়া। স্ত্রীর সাথে মিষ্টি কথা বলা। যদি এসব কিছুর পরও কোন পরিবর্তন না হয় দ্বিতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ:
স্ত্রীর ব্যবহারে রাগ প্রকাশের জন্য একত্রে রাত যাপন থেকে বিরত থাকবে। স্ত্রীর ঘুমানোর জায়গা পৃথক করে দিবে। স্ত্রী যদি এতে সতর্ক হয়ে নিজেকে সংশোধন করে নেয় তাহলে দাম্পত্য জীবন সুখময় হবে। এরপরেও যদি পরিবর্তন না হয় তৃতীয় পদক্ষেপ অবলম্বন করবে।
তৃতীয় পদক্ষেপ:
উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার পরও যদি কোন পরিবর্তন না হয় তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে স্ত্রীকে হালকা শাসন করা। তবে রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে নয়। লক্ষ্য রাখতে হবে যে, শরীরে কোন দাগ না পড়ে। অবশ্য এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করেছেন।
সর্বশেষ পদক্ষেপ:
নিজেরা সমাধান না করতে পারলে সালিসের মাধ্যমে সমাধান করা। তারা কুরআন হাদীস মুতাবেক বিচার করবে। তালাক হল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তারপরও কোন পথ না পেলে শরীয়ত মুতাবেক তালাক দিবে।
কোন মন্তব্য নেই
Please do not enter any spam link in the comment box.