Header Ads

Header ADS

তরীকতের সারকথা। মাওলানা আবু তাসনীম উমাইর

 তরীকতের সারকথা

তরীকতের সারকথা, মাওলানা আবু তাসনীম উমাইর

সুলূক ও তরীকতের সার হচ্ছে দুটি বিষয়, তাখলিয়া ও তাহলিয়া। কৃতজ্ঞতা, ধৈর্যধারণ, বিনয় ও ইখলাস তথা যাবতীয় অর্জনীয় গুণাবলীকে সুফিয়ায়ে কিরামের পরিভাষায় আখলাকে ফাযেলা বলে। অর্থাৎ ফাযাইল অর্জন করা, যাকে তাসাওউফের পরিভাষায় তাহলিয়া বলে। উপরোক্ত গুণাবলী অর্জন করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরয।



এমনিভাবে অভ্যন্তরীণ বর্জনীয় হারাম বিষয়গুলোকে আখলাকে রাযীলা বলে। আর রাযায়েল (অন্তরের রোগ) থেকে বেঁচে থাকাকে তাসাওউফের পরিভাষায় তাখলিয়া বলে। যেমন- অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, রিয়া তথা আল্লাহপাককে খুশি করার পরিবর্তে মানুষকে খুশি করার জন্য আমল করা, অধৈর্য প্রকাশ করা অর্থাৎ আল্লাহ পাকের ফয়সালায় রাজি না হওয়া; বরং তাকদীর বা ভাগ্যলিপির প্রতি দোষারোপ করা, এগুলো মানুষকে গোনাহের দিকে ধাবিত করে। সূতরাং অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, কাজেকর্মে লোক দেখানোর মনোবৃত্তি, ধৈর্যহারা হওয়ার মতো বিষয়গুলো পরিহার করা ফরয।

মোটকথা, অভ্যন্তরীণ প্রশংসনীয় অনেক গুণ রয়েছে, যেগুলো প্রত্যেকের অর্জন করা অপরিহার্য ফরয। আবার নিন্দনীয় অনেক দোষ রয়েছে যেগুলো বর্জন করাও অপরিহার্য ফরয । হক্কানী পীর-মাশায়েখ ও সুফিয়ায়ে কিরাম আপন আপন মুরীদ ও ভক্তদের আখলাকে হামীদা বা দিলের সৎগুণাবলী অর্জন এবং আখলাকে রাযিলা তথা বদ-খাসলতগুলোর সংশোধন করে থাকেন।

তরীকতের পথিকদের  জন্য  তাহলিয়া  আগে  না  তাখলিয়া,  এ  বিষয়ে  তরীকতের মাশাইখদের রুচি বিভিন্ন রকমের। তরীকতের কতক ইমামগণ আল্লাহর পথের পথিকগণকে সর্বপ্রথম গুনাহ বর্জনের অর্থাৎ তাখলিয়ার পরামর্শ দেন। অর্থাৎ অন্তরকে মন্দ ও ধ্বংসাত্মক অভ্যাস থেকে সাফ করতে হবে। তারপর তাহলীয়া অর্থাৎ উত্তম গুণাবলী অর্জন করা সহজ হবে। তাঁরা এভাবে দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন যে, কোন ব্যক্তি যদি জমিনের মধ্যে ফসল উৎপাদন করতে চায়, তাহলে প্রথমে তার জমিন থেকে আগাছা, ঝোপ-ঝার পরিষ্কার করতে হয়। তারপর ফল-ফুলের বীজ বপন করলে ভাল ফসল উৎপন্ন হয়। আমাদের চিশতীয়া তরীকার মাশাইখগণ প্রথমেই অন্তরের জমি থেকে রাযায়েলের আবর্জনা বের করার উপদেশ দিয়ে থাকেন।

হযরত থানভী রহ. বলতেন, (তরীকতের সারকথা) “তোমরা অভ্যন্তরীণ দোষগুলোকে সর্বদা দলিত-মথিত করতে থাকো। যদিও একেবারে নির্মূল হবে না; তথাপি দূর করার জন্য সর্বদা মুজাহাদা করতে থাকলে আশা করা যায় যে, এক সময় তা বিলুপ্তির পর্যায়ে  পৌঁছে যাবে।” তাসাওউফ ও আধ্যাত্মিক সাধানায় অভ্যন্তরীণ দোষগুলোকে দলিত-মথিত করা হয়, আর প্রশংসনীয় গুণাবলী দ্বারা সাধককে অলংকৃত হতে হয়। এই অর্জন ও বর্জনের নামই হচ্ছে ইসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি। তরীকতের মধ্যে ইসলাহে নফস এবং ইসলাহে আমলই হচ্ছে প্রধান কাজ। ইসলাহ শব্দের অর্থ সংশোধন করা। অর্থাৎ এই পাপ-পঙ্কিল জগতের পারিপার্শ্বিকতার দোষে অধিকাংশ ব্যক্তির মাঝে যে কু-অভ্যাসগুলো ঢুকে আছে তা ক্রমান্বয়ে সাধনার মাধ্যমে পরিত্যাগ করে ভাল স্বভাব এবং খাসলতগুলো অর্জন করা। 

যেমন, অলসতা বর্জন করে কর্মমুখরতা অর্জন করা। কর্তব্য কর্মে ধোকা-ফাঁকি না করা। কামচুরি না করা। কামচুরি গোনাহে কবীরা। এতে আযাবের ধমকি আছে। বিলাসিতা ও বাবুগিরি পরিত্যাগ করে সাদাসিধে জীবন-যাপন করার অভ্যাস করা। অকর্মণ্যতার অভ্যাসকে পরিত্যাগ করে কর্মময় জীবন যাপন করার অভ্যাস করা। নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার খাছলতকে পরিত্যাগ করে দয়া ও সদয় ব্যবহারের খাছলত অর্জন করা। অহংকার পরিত্যাগ করে ন¤্রতা অর্জন করা। মিথ্যা বলার অভ্যাস পরিত্যাগ  করে সত্য কথা বলার অভ্যাস করা। নামাযের মধ্যে দিল লাগানোর অভ্যাস না থাকলে সে উদাসীনতা পরিত্যাগ করে খুব  দিল  লাগিয়ে  খুশু-খুজুর সাথে সুন্নাত মুতাবেক নামায পড়ার অভ্যাস করা।  গায়রে মাহরাম মহিলা বা সুশ্রী বালকের প্রতি কুদৃষ্টি বা কু-কল্পনার কু-অভ্যাস থাকলে তা চিরতরে বর্জন করে চক্ষু এবং দিলকে হেফাযতে রাখার অভ্যাস করা। গালি দেয়ার বদ-অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করা। মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, বদ-নজর, সুদ, ঘুষ, নেশা, জুয়া, টিভি-সিনেমা, ভিসিডি, ইন্টারনেট, মোবাইলের মাধ্যমে অশ্লিল ছবি দেখা, অহেতুক ফটো উঠানো, খেলা-ধুলা, গান-বাদ্য করা বা শুনা ইত্যাদির অভ্যাস থাকলে সেসব পরিত্যাগ করা। লোভ-লালসা থাকলে তা দমন করে রাখার অভ্যাস করা।

কামরিপুকে সংযত করে রাখার অভ্যাস করা। স্বার্থপরতার দোষ থাকলে তা বর্জন করে সাম্যনীতি এবং পরোপকারব্রত অবলম্বন করা। ঝগড়া-কলহ, মারামারির অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করে ভাল স্বভাব ভিতরে তৈরী করা। নেয়ামতের শোকর গুযারি এবং মুসিবতে সবর ও ধৈর্যধারণ করার অভ্যাস করা। বিভেদের মনোভাব এবং আমীরের আদেশ লঙ্ঘনের অভ্যাস থাকলে তা একেবারে পরিত্যাগ করা এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার 

https://usblog366.blogspot.com/2021/08/blog-post_25.html




কোন মন্তব্য নেই

Please do not enter any spam link in the comment box.

Blogger দ্বারা পরিচালিত.