যাহের ও বাতেনকে দুরস্ত করা ফরয
যাহের ও বাতেনকে দুরস্ত করা ফরয
বান্দার উপর আরোপিত আহকামসমূহের সমষ্টির নাম শরীয়ত। তাসাওউফের সকল মূলনীতিই কুরআন-হাদীসে বিদ্যমান। আর যারা মনে করে তাসাওউফ কুরআন-হাদীসে নাই, তারা একান্তই ভুলের শিকার।
হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদবী রহ. বলেন যে, কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াত, অগণিত হাদীস ও ইজমা দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, প্রয়োজনীয় নেক আমলগুলো করা, আকীদা বিশ্বাস ঠিক করা, ইখলাস, শুকর, ধৈর্য, যুহদ, বিনয়, তাওয়াক্কুল প্রভৃতি সৎ গুণ অর্জন করা এবং রিয়া, নাশুকরী, দুনিয়ার মোহ, অহংকার ইত্যাদি দোষ থেকে অন্তরকে পাক পবিত্র রাখা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরযে আইন।
সারসংক্ষেপ বিষয়টি হলো কথায়, কাজে, বিশ্বাসে, জাহেরে ও বাতেনে পুরো শরীয়তের অনুসরণ করা ফরযে আইন। এটা ইলমে দ্বীন অর্জন করে হোক বা ওলামা-মাশাইখের সান্নিধ্যে থেকে হোক। বাইয়াত ছাড়া হক্কানী বুযূর্গানেদ্বীনের সোহবতে হোক বা সোহবত অবলম্বনের পাশাপাশি তাদের কারো হাতে বাইয়াত হয়ে হোক। মোটকথা কাজে-কর্মে, বিশ্বাসে, জাহেরে ও বাতেনে, পুরো শরীয়তের অনুসরণ অনুকরণ করা ফরয। আর এটা প্রত্যেক মুসলমানের বেলায় প্রযোজ্য। তাই তাসাওউফ বা পীর মুরীদী ইত্যাদি শব্দের সাথে মতানৈক্য করে অথবা পীর মুরীদীকে মুস্তাহাব মনে করে পূর্বোক্ত বাস্তবতাকে ভুলে যাওয়া আদৌ ঠিক হবে না। ভালভাবে বুঝতে হবে ইসলাহের একটি বিশেষ পদ্ধতির নাম হলো পীর মুরীদী। এই পদ্ধতি মুস্তাহাব বিধায় আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাকের ইসলাহ ও মুস্তাহাব হবে, বিষয়টি এমন নয় বরং: এগুলোর ইসলাহ ফরযে আইন। ইসলাহের সুন্নাতসম্মত তরীকাই সাদেকীনদের সান্নিধ্য বা মুত্তাকিনদের সংস্পর্শ।
উপরোক্ত জাহেরী আমল সহীহভাবে আদায় করার জন্য দ্বীনী ইলম শিক্ষা করতে হবে। চাই কোন খাঁটি ও অভিজ্ঞ আলেমের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে হোক অথবা নির্ভরযোগ্য কিতাব পড়ে। কিতাব অধ্যয়নের মাধ্যমে ইলম হাসিলের পরও সুন্নাত তরীকায় আহলুল্লাহর সোহবত জরুরী।
ইসলামে নবুয়ত ও রিসালাতের পর সবচেয়ে বড় ফযীলতপূর্ণ বিষয় হলো, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সোহবত বা সান্নিধ্য। এ কারণেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য যে সকল মহা মানবদের হয়েছে, তাদের সবচেয়ে বড় ফযীলত পূর্ণ উপাধী হলো, ‘সাহাবী’ (যা সোহবত- শব্দ থেকেই নির্গত)।
সাহাবায়ে কিরাম রাযি.-এর পর যারা তাদের সোহবতে থেকে ইলম ও আমল শিক্ষা করেছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় সম্মানসূচক উপাধী হলো ‘তাবেয়ী’ (অর্থাৎ অধীনস্থ বা অনুসারী)। আর তাদের পরবর্তীদের জন্য ‘তাবে তাবেয়ী’ নির্ধারিত হয়েছে (অর্থাৎ, অধীনস্থদের অধীনস্থ বা অনুসারীদের অনুসারী) ও সুন্নাতসম্মত ধারাবাহিকতায় সলফে সালেহীন এবং হালযামানার আকাবিরে দ্বীন পযর্ন্ত।
খাঁটি আলেম ও আহলুল্লাহ এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যার ইলম মোতাবেক আমল আছে। যার মধ্যে শরীয়ত ও মারেফত উভয়টির সমন্বয় আছে। এ ধরনের বুযূর্গানে দ্বীনের সোহবতে থাকা, তাদের খেদমত নিজের উপর লাযেম করে নেয়া আবশ্যক। যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন, তা না হলে সপ্তাহে এক-আধ ঘন্টা হলেও আহলুল্লাহর সোহবত গ্রহণ করা জরুরী। অন্যথায় দ্বীনের উপর মযবূতী বড়ই মুশকিল।
কোন মন্তব্য নেই
Please do not enter any spam link in the comment box.