মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
মানুষের প্রাণ ধারণের জন্য চাই বায়ু। দানাপানির অভাবে না হয় মানুষ কয়েকদিন বাঁচতে পারে, কিন্তু বাতাসের অভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মানুষের জীবনলীলা সাঙ্গ হয়। তেমনই মানুষের আত্মার জন্য চাই ধর্ম। তাই মানুষ যত পুরানো, ধর্মও তত পুরানো। ধর্ম সত্য ও সনাতন। যদি স্বীকার করি বিশ্বজগতের এক সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞ প্রভু “রাব্বুল আলামীন” তবে স্বীকার করতে হয় যে তিনি মানুষকে জানিয়ে দিতে সক্ষম কোন্ কাজ তার প্রিয়, কোন্ কাজ অপ্রিয় । রাজা ব্রডকাস্ট করছেন, বৈদ্যুতিক শক্তি সেই ভাষণ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যার রেডিও আছে এবং যে রাজভাষা বোঝে সে-ই বলতে পারে, “শোন মানুষ ভাই, আমি রাজার এই বাণী শুনেছি।” এমনি করে বিশ্বের রাজন তাঁর বাণী তাঁর বিশেষ শক্তির মাধ্যমে তাঁর বিশেষ বিশেষ বান্দার অন্তরে নিক্ষেপ করছেন মানুষের আদিযুগ থেকে। আল্লাহর এই বিশেষ বান্দা হচ্ছেন নবী বা ধর্ম প্রবর্তক। আল্লাহর বাণীই কালামুল্লাহ বা ধর্মশাস্ত্র। আল্লাহ্ প্রেরিত সেই বিশেষ শক্তি স্বর্গীয় দূত জিবরাঈল, আর এই অন্তরে নিক্ষেপই ‘ওহী’ বা প্রত্যাদেশ ।
নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা (আ) প্রমুখ অসংখ্য নবী দুনিয়ায় আগমন করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম এবং সর্বশেষ । তিনিও ছিলেন আমাদেরই মত মানুষ, কিন্তু তার বিশেষত্ব এই ছিল যে, তিনি ছিলেন ‘ওহী’ বা প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত মানুষ। আল্লাহর আদেশে তিনি ঘোষণা করেছেন, “ইন্নামা আনা বাশারুম মিসলুকুম ইউহা ইলাইয়্যা”– অর্থাৎ আমি তোমাদের মত মানুষ ভিন্ন আর কিছু নই, তবে আমার প্রতি প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়। জগতের সমস্ত জীবনী লেখক তাঁকে মহামানব বলে মেনে নিয়েছেন। তিনি জগতের ইতিহাসের কেবল রাজনৈতিক ইতিহাসে নয়, কৃষ্টির ইতিহাসেও এমন বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন যে, জুলিয়াস সিজার, নেপোলিয়ন প্রমুখ যে বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন তা জল বুদবুদের মত মিটে গেছে। কার্ল মার্কস, লেনিন প্রমুখ যে বিপ্লব সৃষ্টি করে গেছেন তারও পতন ঘটেছে শতাব্দীর কম সময়ে। কিন্তু রাসূলুল্লাহর নব সৃষ্টি ও আদর্শ জগত আজ পর্যন্ত তো টিকে আছে। আমাদের অটল বিশ্বাস জগতের শেষ দিন পর্যন্ত তা বজায় থাকবে। আমরা তাঁকে বলতে পারি সবচেয়ে বড় বিপ্লবী, বড় শিল্পী।
জগতে অনেক মহামানব আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁদের কৃতিত্ব এক এক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। কেউ ধর্মে, কেউ যুদ্ধে, কেউ বাগ্মিতায়, কেউ সাহিত্যে, কেউ রাজনীতিতে মহত্ত্ব লাভ করেছেন। কিন্তু মহত্ত্বের সর্বক্ষেত্রে কৃতিত্ব লাভ করেছেন কেবল একজন। তিনি মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এটা আমি ভক্তির উচ্ছ্বাসে বলছি না। একজন ফরাসী লেখক আলফ্রেড দে-লামার্টিন তার তুর্কীর ইতিহাসের প্রথম খণ্ডে বলেছেন, “দার্শনিক, বক্তা, ধর্ম প্রচারক, যোদ্ধা, আইন-রচয়িতা, ভাবের বিজয়কর্তা, ধর্মমতের ও প্রতিমাবিহীন ধর্মপদ্ধতির সংস্থাপক, কুড়িটি পার্থিব রাজ্যের এবং একটি ধর্মরাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা দেখ সেই মুহাম্মদকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মানুষের মহত্ত্বের যতগুলো মাপকাঠি আছে তা দিয়ে মাপলে, কোন্ লোক তাঁর চেয়ে মহৎ হতে পারে?” আমরা এইজন্য তাঁকে বলি অতি মহামানব ‘খাইরূল বাশার।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবতার গৌরবের জয়ভেরী বাজিয়েছেন। খোদা মানুষের মুক্তির জন্য পৃথিবীতে এলেন কিংবা তাঁর পুত্রকে সংসারে পাঠিয়ে দিলেন, তারপর এরা অলৌকিক, বড় বড় কাজ করলেন, এইরূপ বিশ্বাসে মানুষকে বড় করা হয় না, বরং খোদাকে খাটো করা হয়। পক্ষান্তরে ইসলামের শিক্ষা অনুসারে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরই মত রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন। তবু তিনি যে এতবড় হতে পেরেছিলেন এটা মানবতার পরম চরিতার্থতা, মানবতার মহাবিজয়।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে হয় জগতের আশ্চর্যতম মানুষ। সেকালে সভ্য জগত থেকে বহুদূরে এক মরুর দেশে এক শিশু ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০শে এপ্রিল, আরবী রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখে ১ সোমবার ভোরে জন্মেছিলেন। জন্মের পূর্বেই তিনি হয়েছিলেন বাপহারা এতিম। তাঁর মা তাঁকে ছেড়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন যখন তাঁর বয়স ছ’বৎসর। তাঁর বুড়ো দাদা তাঁকে লালন-পালনের ভার নিলেন। তিনিও গেলেন ফেলে, যখন তাঁর বয়স মাত্র ন’বৎসর। তখন তাঁর ভার পড়লো তাঁর চাচার উপর । গরীব চাচা তাঁকে লেখা-পড়া শিখাতে পারলেন না। তাঁকে তিনি ছোট বেলায় ভেড়া-ছাগল চরানোর কাজে লাগালেন। আর একটু বড় হলে তিনি তাঁকে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তিনি সংসারী হয়েও বিরাগী জীবন যাপন করতে লাগলেন। তখন অনেক সময় তিনি পাহাড়ের গুহায় বসে তাঁর পরম প্রভুর ধ্যান-ধারণায় দিন কি দিন, রাত কি রাত কাটিয়ে দিতে লাগলেন, তাই হলো তাঁর প্রিয় কাজ । যখন তাঁর বয়স ৪০ বৎসর, তখন তাঁর কাছে দীন-দুনিয়ার মালিকের কাছ থেকে দূত এসে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি আল্লাহর রাসূল ও সংবাদবাহক নবীরূপে নিযুক্ত হয়েছেন। এখন থেকে তাঁর একমাত্র কাজ হলো আল্লাহর কথা জগতে প্রচার করা।
তিনি ছিলেন অতি প্রিয় দর্শন, মধুর স্বভাব ও সর্বজনপ্রিয় মানুষ। কিন্তু যখন তিনি প্রচার করতে শুরু করলেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্” –আল্লাহ্ ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল বা সংবাদবাহক- তাঁর দেশবাসী তাঁর পরম শত্রু হয়ে দাঁড়ালো। কত প্রলোভন, কত ধিক্কার, কত যন্ত্রণা তারা তাঁকে দিল। কিন্তু তিনি তাঁর প্রভুর কাজ হাসিমুখে অবিচলিতভাবে করতে লাগলেন, তাতে তিলমাত্র শৈথিল্য করলেন না। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করতে চেষ্টা করলে তিনি প্রিয় জন্মভূমি ছাড়লেন; কিন্তু প্রভুর কাজ ছাড়লেন না। ধর্মের জন্য তাঁর পবিত্র দেহের রক্তপাত হলো। তাঁর ভক্তরা জান কুরবানী করলেন, “আল্লাহুম্মা রফীকুল আলা’ –হে আল্লাহ্, হে মহান সখা। তারপর তার আত্মা জান্নাতুল ফিরদাউসে মহাপ্রয়াণ করলো। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ইনি মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
ইনি যে ধর্ম প্রবর্তক হবেন তাতে বিস্ময়ের কোনও কথা ছিল না। কিন্তু যিনি এক আজন্ম অনাথ নিরক্ষর সহায়-সম্পদবিহীন দরিদ্র তিনি কিরূপে অতি মহামানব হলেন, সেটা কি পরম আশ্চর্যের বিষয় নয়? টমাস কারলাইল বিস্মিত হয়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন-
“এই আরবের মানুষ মুহাম্মদ আর সেই একটি শতাব্দী- একি এমনটি নয় যে কোনও স্ফুলিঙ্গ, একটি মাত্র স্ফুলিঙ্গ পৃথিবীর উপর পড়লো, এমন পৃথিবীর উপর যাকে মনে হয়েছিল সামান্য বালি মাত্র। কিন্তু দেখ তো, সেই বালি হয়ে দাঁড়িয়েছে একেবারে বারুদ; আকাশ প্রমাণ হয়ে জ্বলে উঠেছে দিল্লী থেকে গ্রানাডা পর্যন্ত ।”
ধর্মপ্রবর্তক অনেক হয়েছেন কিন্তু কেউ চিরকুমার, কেউ সংসারত্যাগী, কেউ নিরীহ ধর্মগুরু। আমাদের মত অসংখ্য সাংসারিক জীব তাঁদেরকে ভক্তি বিমুগ্ধ চিত্তে দেখবে মাত্র। সাধ্য কি তাদের কাছে যাওয়া। আমরা তাদের মধ্যে আমাদের জীবনপথের আদর্শ সাথী পাই না। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সকলেরই আদর্শ। স্বামী দেখতে পাবে তার মধ্যে স্ত্রী অনুরাগী আদর্শ স্বামী। পুত্র দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে পিতৃ-মাতৃভক্ত আদর্শ পুত্র। পিতা দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে মমতাশীল কর্তব্যপরায়ণ আদর্শ পিতা । গৃহী দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে স্বহস্তে গৃহে কর্মরত আদর্শ গৃহী। যোগী দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে ধ্যান-নিরত আদর্শ যোগী। প্রভু দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে সদা হাস্যবদন আদর্শ প্রভু। ভৃত্য দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে কর্তব্যনিষ্ঠ পরিশ্রমী আদর্শ ভৃত্য। সৈনিক দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে রণকুশল স্থির মস্তিষ্ক সেনাপতি। নেতা দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে হিতৈষী জনসেবক আদর্শ নেতা। বিচারকর্তা দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে নিরপেক্ষ ন্যায়নিষ্ঠ, আদর্শ বিচারক। কুরআন শরীফে তাই তাঁর সম্বন্ধে বলা হয়েছে, “লাকাদ কানা লাকুম ফী রাসূলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানা” – নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যে রয়েছে অতি উত্তম আদর্শ।
তাঁর পূর্বে ও পরে অনেক ধর্মপ্রবর্তকের সম্বন্ধে অনেক অলৌকিক ক্ষমতার উপাখ্যান শুনতে পাই। কেউ ভরা-দরিয়ার মধ্যে শুকনা পথে পার হয়ে গেছেন, কেউ মতাকে বাঁচিয়েছেন, কেউ পাহাড়কে ছাতার মতো ঊর্ধ্ব করে ধরেছেন। এই সমস্ত ভজেরা বিশ্বাস করে। অবিশ্বাসীকে বিশ্বাস করার মতো কোনও দলিল নেই, হযরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধেও এইরূপ অনেক অলৌকিক কার্যের বর্ণনা আছে। সেগুলোর অনেকটি ঐতিহাসিক প্রমাণের কষ্টিপাথরে সত্য বলে টিকতে পারে। কিন্তু দুটি অলৌকিক কার্য অতি অবিশ্বাসীও বিশ্বাস করতে বাধ্য। একটি আরব জাতির অভ্যুত্থান ও দ্বিতীয়টি মহা কুরআন এইখানে দু’জন অমুসলমানের নিরপেক্ষ সাক্ষ্য উপস্থিত করবো।
টমাস কারলাইল বলেন- “আরব জাতির পক্ষে এ ছিল আঁধার থেকে আলোর জন্য তারা এতে পেলো মহৎ জীবন। এক গরীব রাখালের জাতি পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে তার মরুভূমিতে সকলের অজ্ঞাতসারে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, এক বীর নবীকে উপর থেকে পাঠানো হল তাদের কাছে এমন কথার সঙ্গে, যা তারা বিশ্বাস করতে পারে। দেখতে অজ্ঞাত হচ্ছে জগদ্বিখ্যাত, ক্ষুদ্র হচ্ছে জগৎ-বৃহৎ। তারপর এক শতাব্দীর মধ্যে আরব হচ্ছে এদিকে গ্রানাডায় আর ওদিকে দিল্লীতে-বীর্য-ঐশ্বর্যে আর প্রতিভার আলোকে আলোকিত হয়ে আরব বহু যুগ ধরে পৃথিবীর এক বড় অংশের উপর আলো দিচ্ছে। একটি মৃত জাতির জীবনদান, একি শত সহস্র মৃত ব্যক্তির জীবনদানের চেয়ে অলৌকিক নয়?
কুরআনের শক্তি সম্বন্ধে ইমানুয়েল ডাস্ বলেন- একটি পুস্তক যার সাহায্যে আরবরা মহান আলেকজান্ডার অপেক্ষা, রোম অপেক্ষা, পৃথিবীর বৃহত্তর ভূভাগ জয় করতে সক্ষম হয়েছিল, রোমের যত শত বৎসর লেগেছিল তার জয় সম্পূর্ণ করতে, আরবের লেগেছিল তত দশক। এরই সাহায্যে সমস্ত সেমিটিক জাতির মধ্যে কেবল রবরাই এসেছিল ইউরোপে রাজারূপে, যেখানে ফিনিশীয়রা এসেছিল বণিকরূপে আর ইহুদীরা এসেছিল পলাতক কিংবা বন্দীরূপে তারা এসেছিল ইউরোপে এইসব পলাতকদের সঙ্গে মানব জাতির সামনে আলোকরশ্মি উঁচু করে ধরতে- কেবল তাঁরাই যখন চারিদিকে ছিল অন্ধকার, গ্রীসের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে তুলতে; দর্শনশাস্ত্র, চিকিৎসাশাস্ত্র,
জ্যোতির্বিদ্যা ও সঙ্গীতের সোনার শিল্প পূর্ব-পশ্চিমকে শেখাতে, আধুনিক বিজ্ঞানে শৈশব দোলার কাছে দাঁড়াতে আর যেদিন গ্রানাডার পতন হয়েছিল সেদিনের জন্য এই পরবর্তী যুগে আমাদের চিরকাল কাঁদাতে।
আমরা উপসংহারে সেই মহানবী সম্বন্ধে এই আশীর্বাণী (দরূদ) পাঠ করি :
বালাগাল উলা বি কামালিহি
কাশাফাদ্দুজা বি জামালিহি;
হাসুনাত জামিযউ খিসালিহি
সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি।
কোন মন্তব্য নেই
Please do not enter any spam link in the comment box.